
স্বপন চন্দ্র লোধের মুসলিম বন্ধু আবুল হাসেম বেপারি ভুয়া দলিল তৈরী করে, হিন্দু বন্ধু স্বপন চন্দ্র লোধের সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছে। সম্পত্তি দখলে নিতে না পারলেও বাঁধা প্রদান ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলছে মুসলিম বন্ধু আবুল হাসেম বেপারি গং।
এই ঘটনা ঘটে চাঁদপুর জেলা ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের দত্ত বাড়ির স্বপন চন্দ্র লোধের পরিবারের সাথে।
জানা যায়, খাজুরিয়া গ্রামের প্রয়াত বসন্ত কুমার দত্তের ছেলে স্বপন চন্দ্র লোধ ও প্রতিবেশি আবুল হাসেম বেপারি ছিলেন দীর্ঘদিনের বন্ধু। একজনের বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ থাকতো। স্বপন লোধ নিজের ঘরের কথা স্ত্রী সন্তানদের না বলে বন্ধু আবুল হাসেমকে বলতো। জমিজমার কাগজপত্র সবকিছুই আবুল হাসেমের নখদর্পণে। কিন্তু এই বন্ধুত্বের অগোচরে চলে অন্যকাণ্ড। যা স্বপন লোধের মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে প্রকাশ হয়ে পড়ে।
স্বপন লোধের ছেলে শিমুল লোধ জানান, পৈত্রিক সূত্রে তারা যেটুকু সম্পত্তির মালিক হন তার মধ্যে ৬০ শতক ভুমি ১/১ খতিয়ানের রয়েছে। উক্ত খতিয়ান থেকে গোপনে আবুল হাসেম বেপারি দলিল ঘষা-মাজা ও জালিয়াতি করে নিজের নামে ৫৬ শতক ভুমি নামজারি সৃজন করে নেয়।
তার সৃজনকৃত নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ১৯৮৮ সালের ৪৯৮২নং ও ১৯৯৪ সালের ২৩১৮নং দলিল দুইটি ঘষা-মাজা ও ছল-চাতুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। ৪৯৮২নং দলিলে দাতা গ্রহিতা ঠিক থাকলেও ভুমির পরিমান ৪৪ শতক এর স্থানে দলিল ঘষা-মাজা করে ১ একর (একশত শতক) করা হয়েছে। সাবেক ৫৮ দাগ হালে ১০০ নং দাগ দলিলে না থাকলেও ওই দলিল দিয়ে ওই দাগের ৫৬ শতক জমি আবুল হাসেম নামে খারিজ করে নেয়া হয়েছে।
২৩১৮নং দলিলে দাতা গ্রহিতা কোন কিছুরই মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দলিলটির মৌজা মূলত ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ভাটিয়ালপুর হলেও ঘষামাজা করে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া মৌজা দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে এই দুই দলিলের বিপরীতে প্রদান করা ভায়া দলিল নিয়েও ঝামেলা রয়েছে। ১৯৬৮ সালের ১৩১৮ নং দলিলেও দাতা গ্রহিতার নাম মিল পাওয়া যায় নি। ওই দলিলটি পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের বিষুরবন্দ মৌজার। এটিও ঘষামাজা করে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া মৌজা দেখানো হয়।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা চাঁদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমে তল্লাশি করে আবুল হাশেম কর্তৃক দলিল ঘষামাজার বিষয়টি সঠিক বলে নিশ্চিত হয়।
প্রয়াত স্বপন লোধের স্ত্রী কাজল রানী, ছেলে শিমুল লোধ, গনেশ লোধ, মেয়ে মায়া রানী ও শিলা রানী জানান, প্রয়াত স্বপন লোধের বন্ধু হিসেবে আবুল হাসেমকে তারা এখনো শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। কিন্তু বিগত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা এক প্রকার আতঙ্কে রয়েছি। আমাদের সম্পত্তিগুলোতে আমরা আবাদ করতে পারছি না, তাদের বাঁধার কারণে জমিগুলো অনাবাদি রয়ে গেছে, পুকুরে মাছ ধরা, গাছগাছালি থেকে ফল পাড়া, ডাল কাটাও বন্ধ। তারা বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিনত হয়েছে। যা আমরা কখনই চাইনি।
শিমুল লোধ জানায়, খারিজ বাতিলের আবেদনের পর গত ২৫ আগস্ট ২০২৫ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। ওই শুনানীতে আমি দুইটি দলিল ও ভায়া দলিলসহ তিনটি দলিলের সহি-মোহর যুক্ত অবিকল নকল উপস্থাপন করলেও দলিল ঘষামাজা ও ছল-চাতুরীর বিষয়টি উঠে আসে। ফলে সহকারি কমিশনার (ভুমি) এর বিজ্ঞ আদালত আবুল হাসেমকে উক্ত দলিলের মূল কপি ও সহি মোহর যুক্ত অবিকল নকল দলিল দাখিলের নিদের্শনা দেন। উপজেলা ভুমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তারা এখনো তা জমা দেননি।
এব্যাপারে দলিল ঘষামাজা ও ভুয়া দলিল সৃজন বিষয়ে আবুল হাসেম বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ সত্য নহে। যথাসময়ে মুল দলিল সহকারি কমিশনার (ভুমি) কার্যালয়ে জমা দিবেন। আমার জমাখারিজকৃত কিছু সম্পত্তি অপর কয়েকটি পরিবার দীর্ঘদিন যাবত দখল করে রেখেছে।