
ভারত আক্রমন করলো তৈমুর লঙ। ‘দিল্লীর সুলতনগন পৌত্তালিকতার উচ্ছেদ সাধন না করে পৌত্তালিকদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করছে’ এই অজুহাতে তিনি দিল্লী আক্রমন করলেন।
দিল্লী অভিমুখে যাত্রাপথে দীপালপুর, ভাতনেইর প্রভৃতি স্থান লুণ্ঠন করে এবং অসংখ্য নর-নারীর প্রাণ নাশ করে দিল্লীর উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হলেন। সেখানে তিনি প্রায় এক লক্ষ হিন্দু বন্দীকে হত্যা করে এক নারকীয় কান্ড ঘটালেন।
এরপর তৈমুর দিল্লী পৌছালে তার সেনাবাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিন্দু নাগরিকগন আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে এক ব্যপক হত্যাকান্ড শুরু হয়। তৈমুরের দুর্ধর্ষ বাহিনী অগনিত হিন্দু নর নারীর রক্তে দিল্লী নগরী রঞ্জিত করলো। দিল্লী নগরীতে কয়েকদিন ধরে পৈশাচিক হত্যাকান্ড ও লুণ্ঠনের পর তৈমুর সিরি, জাহাপনা ও পুরাতন দিল্লী সহ আরো তিনটি শহরে প্রবেশ করে অনুরূপ লুণ্ঠন ও হত্যাকান্ড ঘটান।
দিল্লী হত্যাকান্ড এমন পৌশাচিক এবং এত পরিমান মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল যে, এই হত্যা কান্ডের পরবর্তী দু’মাস পর্যন্ত দিল্লীর আকাশে কোন পাখি উড়ে নাই।
ঐতিহাসিকদের মতে তৈমুর মোট ১৭ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছিলেন যা সেই সময়ের হিসাবে সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫-৭%।
তৈমুর তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন-দিল্লিতে আমি ১৫ দিন ছিলাম। দিনগুলি বেশ সুখে ও আনন্দে কাটছিল। দরবার বসিয়েছি, বড় বড় ভোজ সভা দিয়েছি। তারপরেই মনে পড়ল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই আমার হিন্দুস্থানে আসা। খোদার দয়ায় আমি সর্বত্রই আশাতীত সাফল্য পেয়েছি। লক্ষ লক্ষ কাফের হিন্দু বধ করেছি। তাদের তপ্ত শোনিতে ধৌত
হয়েছে ইসলামের পবিত্র তরবারিতাই এখন আরাম-আয়েসের সময় নয় বরং কাফেরদের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ করা উচিৎ।
এই হত্যকান্ড এত পৈশাচিক হয়েছিল যে, বিভিন্ন স্থানে মুসলমান রাজকর্মচারীরা এই খবর প্রচার করে করে হিন্দুদেরকে ইসলাম গ্রহন করতে নির্দেশ দেয়; নির্দেশ না মানলে তৈমুরের বাহিনীকে খবর দেবে, এই ভয়ও দেখানো হয়। ফলে বিভিন্ন স্থানে ভয়ার্ত মানুষ দলে দলে মুসলমান হতে লাগল। সেজন্য বাংলায় এখনো “শুনে মুসলমান” কথাটি প্রচলিত আছে।
সিকান্দার শাহ ছিলেন অত্যান্ত ধার্মিক মুসলমান। তিনি হিন্দুদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতেন। তারই আদেশে মথুরার বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরটি ধুলিস্যাত করা হয়েছিল। তিনি হিন্দুদের যমুনা নদীতে স্নানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। জৈনক ব্রাম্মন “হিন্দু ধর্ম ইসলাম ধর্ম অপেক্ষা কোন অংশেই হীন নহে” এই কথা বলার অপরাধে সুলতানের আদেশে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড হিন্দু বিদ্বেষী ও ইসলাম ধর্ম মতে পরম ধার্মিক মুসলমান শাসক। তার অত্যাচারে এবং আদেশে কাশ্মীরের হিন্দুগন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
(সুত্রঃ- ভারত ইতিহাস কথা, ডক্টর কে সি চৌধুরী, পৃ-১৩৭)
লেখাটা সংগ্রহ করা হয়েছে –
দক্ষিণবঙ্গ আহ্বান, সংখ্যা-৭ থেকে।