এক পরিবারের তিন হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ!

একসাথে একই হিন্দু পরিবারের মা পারুল বালা রানী (৪০), মেয়ে প্রিয়ংকা রানী মিস্ত্রি (পুস্প)(১৪) এবং কাকাতো বোন সোমা রানী মিস্ত্রি কে গণধর্ষণ করে মো. মকবুল হাওলাদারের ছেলে মো. বজলু গং।

গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে ২০০১ সালে ১৩ই অক্টোবর রাতে বরিশাল জেলা সদর থানার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামে।

রাজারচর গ্রামের মৃত-রজনী কান্ত মিস্ত্রির ছেলে পবিত্র কুমার মিস্ত্রি হোগলা পাতার ব্যবসা করতেন। পবিত্র কুমার মিস্ত্রির দুই ছেলে, দুই মেয়ে, বোন আর স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার।

বাংলাদেশে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের দাপট বেড়ে যাওয়ায় বড় মেয়ে গৌরীকে শহরের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন পবিত্র কুমার মিস্ত্রি।

১০ই অক্টোবর সকাল ১১ টার দিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. বজলু এবং মো. আতাহার তালুকদার সহ আরো ১০/১২ জন বাড়িতে এসে পবিত্র কুমার মিস্ত্রি কে খোঁজ করে। পবিত্র কুমার মিস্ত্রি কে না পেয়ে তার স্ত্রী সন্তানদের পরনের কাপড় ছাড়া সকল মালামাল গণিমতের মাল হিসেবে লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় পবিত্র কুমার মিস্ত্রিকে তাদের সাথে দেখা করার জন্য বলে যায়।

কিন্তু প্রাণের ভয়ে পবিত্র কুমার মিস্ত্রি দেখা করতে না যাওয়া ১৩ অক্টোবর রাত প্রায় ১টার দিকে তার বাড়িতে আবার হামলা চালায়। ভাংচুর করে ঘরের দরজ। পরে পবিত্র কুমারের স্ত্রী পারুল বালা রানী (৪০), মেয়ে প্রিয়ংকা রানী মিস্ত্রি (পুস্প)(১৪) এবং কাকাতো বোন সোমা রানী মিস্ত্রিকে গণধর্ষণ করে মো. মকবুল হাওলাদারের ছেলে মো. বজলু গং।

গণধর্ষণের ঘটনায় পবিত্র কুমার মিস্ত্রি ১৪ই অক্টোবর কোতয়ালী থানা মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-২৫। মামলায় ধারা- নাঃ শিঃ নির্যাতন দমন আইন ১০০ এর ৯(১)৩/৩০ রুজু হয়, মামলার এজহারে ১ নং আসামী হিসাবে মো. বজলু, পিতা- মো.মকবুল হাওলাদার, সাং-রাজারচর, থানা-কোতয়ালী, জেলা-বরিশাল এর নাম উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য আসামীদের নাম ঠিকানা না জানায় তাৎক্ষনিক ভাবে কোন নাম উল্লেখ করা হয় নাই।

অপর দিকে ঘটনাটি সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন নয়, এটা প্রমাণের জন্য আসামীরা পরিকল্পিত ভাবে পবিত্র কুমার মিস্ত্রিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই নিরপরাধ হিন্দু ব্যাক্তিকে গণধর্ষণ মামলায় যুক্ত করতে বাধ্য করে। তারপর ক্ষমতার দাপটে আসামীরা থানা পুলিশ দিয়ে ওই দুই নিরপরাধ হিন্দু ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করায়। গ্রেফতার দুই নিরপরাধ হিন্দু ব্যাক্তি হলেন, বরিশাল জেলা কোতয়ালী থানার রাজারচর গ্রামের রমান কান্ত ভূইয়ার ছেলে অনুকূল ভূইয়া এবং তপন শিকদারের ছেলে গোপি শিকদার।

এতেও আসামীরা থেমে থাকে নাই, কিছু দিন পর পবিত্র কুমার মিস্ত্রির বাড়ীতে গিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামলা না চালানোর স্বীকারোক্তি হিসাবে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়।

পরবর্তীতে বাদী ও ভিকটিমরা সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে মামলা প্রমাণ করতে অনীহা ও অসহযোগীতা করায় পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে কোতয়ালী থানার এফ আর টি সং-৪৫, তারিখ-১১/০২/২০০২ বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন।

আজও এই হিন্দু পরিবার ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

তথ্য সূত্র- বাংলাদেশ গেজেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *