গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং: ডা. কিশোর বিশ্বাস।

ব্রিটিশরা ডিভাইড এন্ড রুল পলিসিতে দেশ শাসন করতো। লাট ব্যাম ফিল্ড ফুলার প্রকাশ্যেই বললেন, ‘ব্রিটিশদের চোখে মুসলিম সম্প্রদায় হল তার সুয়ো রানী। দেশ মাতৃকায় বলি প্রদত্ত বিপ্লবীরা (ব্যতিক্রমী বাদে) সবাই হিন্দু। তাদের উপর চরম অত্যাচার নামিয়ে আনার জন্য ব্রিটিশরা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে উত্তর প্রদেশ থেকে মুসলিম নিয়োগ করা আরম্ভ করল। অপরদিকে কংগ্রেসের গান্ধিজী এবং নেহেরুজী চরম মুসলিম তোষণ আরম্ভ করলেন । এই বলে বলিয়ান হয়ে ১০ কোটি মুসলিম লীগের নেতা জিন্না ৩০ কোটি হিন্দুদের বিরুদ্ধে ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে ঘোষণা করলেন। ১৫ই আগস্ট বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর বাড়িতে কলকাতার কুখ্যাত মুসলিম লীগের গুন্ডাদের অতি গোপন মিটিং হয়। তিনি এদের সাহায্য করার জন্য উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে মুসলিম (NWFP) পুলিশ আনিয়ে ছিলেন এবং জেহাদ পরিচালনা করার জন্য মুসলিম ন্যাশনাল গার্ড নিয়োগ করেছিলেন। কলকাতার ২৪ টা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মধ্যে ২২ টায় মুসলিমদের পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মুসলমানদের দোকানগুলিতে ‘পাকিস্থান’ লিখে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১৬ থেকে ১৯শে আগস্ট পর্যন্ত কলকাতার রাস্তায় কোনো পুলিশ মিলিটারি দেখা যায়নি। তাদের সবাইকে ব্যারাকে বসে থাকতে হয়েছিল সরকারের রাষ্ট্রীয় নির্দেশে। নির্দিষ্ট দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল সোহরাওয়ার্দির পক্ষ থেকে।সেদিন সোহরাওয়ার্দী নিজে লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসেছিলেন যাতে পুলিশ চাইলেও কোন পদক্ষেপ না নিতে পারে। শহীদ মিনারে মুসলিম লীগের ৫০ হাজার কর্মী প্রাণঘাতী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপস্থিত ছিল এবং মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমউদ্দিন, মহম্মদ ইস্পাহানি, জ্যোতি বসু ও যোগেন মন্ডল।

সমর্থকেরা আল্লাহু আকবর,পাকিস্তান জিন্দাবাদ, লড়কে লেঙ্গা পাকিস্তান, মারকে লেঙ্গা পাকিস্তান হুংকার ছাড়তে ছাড়তে প্রথমে জবাই করে যেসব অমুসলিম কৌতুহল বসত মিটিং দেখতে এসেছিলেন তাদের।

তখন কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন আবুল কালাম আজাদ সাহেব তিনি কলকাতা এয়ারপোর্টে যাবার পথে দু তিনবার গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হন। তিনি এয়ারপোর্টে দেখতে পেলেন সারি সারি মিলেটার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অফিসারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দিলেন তাদের উপরে দাঁড়িয়ে থাকারই নির্দেশ আছে।

অথচ শহরে তখন লুঠ ,অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্মান্তরকরণ চলছে। কতিপয় মহিলাদের ধর্ষণ করে হাত-পা কেটে ছাল ছাড়িয়ে গরুর মাংস বিক্রির দোকানে চুলের সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ভিক্টোরিয়া কলেজে চারজন ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে তাদের স্তন কেটে হত্যা করে যৌনাঙ্গে গোমাংস ঝুলানোর হুক ঢুকিয়ে কলেজের দোতলার একটি ক্লাস রুম থেকে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

অতঃপর প্রতিরোধে নেমেছিলেন গোপাল পাঠা (মুখোপাধ্যায়), রাম চ্যাটার্জী, ভানু বসু, যুগল কিশোর ঘোষ, ইন্দুভূষণ আরো অনেকে। তাই কলকাতা সেদিন রক্ষা পেয়েছিল।

অমলেশ ত্রিপাঠীর লেখা থেকে জানা যায় লর্ড ওয়েভেল বলেছিলেন,’পলাশীর যুদ্ধের থেকেও বেশি লোক মারা গিয়েছিল কলকাতার দাঙ্গায়’।

‘লাস্ট ডেজ অফ ব্রিটিশ রাজ’গ্রন্থে লিওনার্দ মোসলে লিখেছেন, ‘১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসের ওই কুৎসিত ও ভয়াবহ হত্যাকান্ড কলকাতাকে ৭২ ঘণ্টার জন্য বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিল। চৌরঙ্গী স্কোয়ারে নারী-পুরুষ শিশুদের পচা গলা দেহগুলি নর্দমায় পড়েছিল। শকুন লাশ গুলি ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছিল।

জ্যোতি বসুর জীবনী থেকে জানা যায় কলকাতার দাঙ্গায় কুড়ি হাজার লোক মারা গিয়েছিল।

লিখেছেন –
ডা. কিশোর বিশ্বাস
লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *