
গত ১৭আগষ্ট রবিবার ‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা হয় রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে। এই সভার আয়োজন করে আইপিনিউজ বিডি।
২০২৪ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগণ নিজেদের অধিকার ফিরে পাবে বলে মনে করেছে। কিন্তু তাদের সেই আশা ভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি। তাদের ওপর নিপীড়ন কমেনি। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে একটি গোষ্ঠী।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ছাত্র-যুব সংগঠনের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি।

সভায় আইপিনিউজের যুগ্ম সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা বলেন, দেশের ৫৪টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদের স্বতন্ত্র রীতি, ঐতিহ্য ও প্রথাগত আচার-বিশ্বাস নিয়ে সুপ্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে বসবাস করছে। কিন্তু ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশেও তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এবং নিরীহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর নিপীড়ন ও ভূমি বেদখলের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পরও মূলধারার গণমাধ্যমে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের খবর গুরুত্বসহকারে উঠে আসছে না। একটি গোষ্ঠী সব সময় তাদের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সহসাধারণ সম্পাদক হেলেনা তালাং বলেন, ‘যেখানে বন, সেখানে আদিবাসী। বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে লিখতে হবে। শুধু সাংস্কৃতিক বিষয় নয়, তাদের দুঃখ-দুর্দশাও মিডিয়ায় উঠে আসা জরুরি।’
ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকারবিষয়ক সংগঠন অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ভূমি অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা না হলে তারা প্রান্তিক অবস্থায় থেকেই যাবে। ভুয়া দলিল ও ভূমিদস্যুরা তাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। মিডিয়া এ বিষয়গুলো তুলে আনতে পারে। জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি ইউজিন নকরেকও মিডিয়ার সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, মিডিয়া যদি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবরগুলো প্রকাশ ও নিয়মিত ফলোআপ না করে তাহলে সাধারণ মানুষ ভুল ধারণার শিকার হয়। সিভিল সোসাইটি ও মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক বৃদ্ধি জরুরি।
সভায় ছয় দফা দাবিনামা তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্মপরিচয় ও গণমাধ্যম স্বীকৃতি নিশ্চিত করা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর সংবেদনশীল ও বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রচার করা, পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং ভূমি কমিশন ও পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন।
পরিশেষে আইপিনিউজের সম্পাদক আন্তনী রেমা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সমর্থন ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে আলোচনা সভা সমাপ্ত করেন।
তথ্য সূত্র – প্রথম আলো।