
বাংলাদেশের রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগের শাসন আমলের ১৫ বছরে কুমিল্লার এমপি বাহাউদ্দিন বাহার ও তার সহযোগীরা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখল করেছে। ফাঁকা ও বিরোধপূর্ণ জমি পেলেই বাহিনী নিয়ে সেই জমিতে হামলে পড়তেন। দখল হওয়া অধিকাংশ জমিই স্থানীয় হিন্দুদের।
কুমিল্লা কান্দিরপাড় মোড় থেকে একটু দূরে সোনালী ব্যাংকের সামনে মনোহরপুর মৌজায় ৬৬২ নং দাগে এপি ঔষধালয় ও হিন্দুদের প্রায় ৭০ শতাংশ জমি দখল করে সোনালী স্কয়ার নামে ১১তলা রাজকীয় ভবন নির্মাণ করেছেন এমপি বাহার। জমির মালিক ছিলেন শিক্ষক মনিন্দ হালদার, কৈলাশ চন্দ্র দত্ত ও ইন্দ্রভূশন দত্ত। এই জমি উদ্ধারে কুমিল্লা ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা চলছে। মামলা নং-২৩৫। এই ভবনে ফ্লাট কিনে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। জমির বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভবনের ৫২টি ফ্লাট বিক্রি করেও ক্রেতাদের দলিল করে দিতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, আমি ৯তলায় ৮৭ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্লাট কিনেছি।
কিন্তু এখনো দলিল করে দেয়নি। দলিল করতে বললে তিনি কয়েক কিস্তিতে টাকা ফেরত নিতে বলেছেন। কিন্তু দলিল দিতে পারবে না।
কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে পরিত্যক্ত লিবার্টি সিনেমা হলের ৭০ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি দখল করেন বাহার। অভিযোগ আছে, এজন্য তিনি জমির মূল মালিক রাম চাঁদ ক্ষেত্রীর সন্তান সাজিয়ে ভারত থেকে বিধান সাহা নামের এক ব্যক্তিকে এনে এনআইডি করে জমি দলিল করে নেয়ার চেষ্টা করনে। পরে ধরা পড়ে যাওয়ায় সাব-রিজিস্ট্রার অফিসে নিজের অনুসারী আবুল বাসার সাজ্জাদকে দিয়ে জোরপূর্বক রেকর্ড রুমে ঢুকে অফিস সহকারী ছামাদকে জিম্মি করে দলিল ঘষামাজা করে আকার পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নং-১৫(১১)২০।
ছাতিপট্টি বজ্রপুর মৌজায় বিএস ১৪১৭৬ নং দাগে দশপূজা কালিবাড়ি মন্দিরের ২৬.৫ শতাংশ জমি দখল করে বাউন্ডারি দিয়ে রাখা হয়। সাবেক এমপি বাহারের অনুসারী নান্টু মল্লিকের নেতৃত্বে ভুয়া ছেলে নিয়ে এই জমি দখল করা হয়। এই জমি নিয়ে ৩য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা চলছে। মামলা নং-৮০/১৫। রিভিশন নং-১৮/২৩।
এ বিষয়ে মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানিক কুমার ভৌমিক বলেন, যারা দখলের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই সাবেক এমপির লোক। এমপির সভা সমাবেশে সম্মূখসারিতে এরাই থাকে। বাহারের ইশারা না থাকলে মন্দিরের জমি দখলের এত সাহস তাদের কখনোই হতো না। হয়তো বাহার সব জানেন।
কুমিল্লা শহরের শিতলভাণ্ডার মিষ্টির দোকান দুইমাস বন্ধ রাখেন বাহারের লোকজন। বাহারের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা সিহানুক শিতলভাণ্ডার থেকে ৫০ লাখ, মাতৃভাণ্ডার থেকে ৮০ লাখ, ভগবতি পেড়াভাণ্ডার থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন।
কুমিল্লা জেলা শহরের ঘোষপাড়ার কালীমন্দির সংলগ্ন প্রায় এক একর আয়তনের একটি পুকুর ভরাট করে দখল করা হয়। কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল এই পুকুর দখল করে নেন। ২০১৮ সালে কুমিল্লা খ্রিস্টানপাড়ার পুকুর দখল করে গোমতী নদী থেকে বালু এনে ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান রোমেল। দখল হওয়া পুকুর উদ্ধারে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ আন্দোলন করে কাজ হয়নি। এসব পুকুরের জমি শত শত কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।