শ্মশানের জমি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

ছবি: শ্মশানের জমি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

শ্রীশ্রী লোকনাথ সেবাশ্রম শান্তিবন মহাশ্মশানের জমি দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

২৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সচেতন এলাকাবাসী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের আয়োজনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর মুক্তমঞ্চে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শ্রীশ্রী লোকনাথ সেবাশ্রম শান্তিবন মহাশ্মশানটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আখাউড়া উপজেলা পৌরশহরের রাধানগর কলেজ পাড়ায় অবস্থিত।

ছবি: শ্মশানের জমি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

সমাবেশে লোকনাথ সেবাশ্রমের পূজারি ও মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আশীষ ব্রহ্মচারী বলেন, ২০১৪ সালের একটি রিট পিটিশনের উপর ভিত্তি করে প্রশাসন খাস জমি চিহ্নিত করার নামে একটি পক্ষকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশাসন মূলত রিট পিটিশনের আদেশের ভুল ব্যাখা দেয়। এ ছাড়া বিষয়টি ২০১৬ সালে মীমাংসিত হয়ে যায়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোনো আদেশ আদালত দিয়েছেন কিনা সেটিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। জায়গা নিয়ে মামলা চলমান আছে বলা হলেও প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। এ ঘটনার প্রতিবাদে মৌন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই বিভিন্ন মন্দিরে কালো পতাকা টানানো হয়েছে। আমি নিজেও সাদা পোশাক ছেড়ে কালো পোশাক ধারণ করেছি। প্রশাসন তাদের অবস্থান থেকে না সরে দাঁড়ালে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

শ্মশান কমিটির সভাপতি হীরালাল সাহা বলেন, “শ্মশানের মোট জমি ১১১ শতকের বেশি। কিন্তু বিএস জরিপে মাত্র ৫২ শতাংশ রেকর্ডভুক্ত হয়। যে কয়জনের নামে ভুলে শ্মশানের জায়গা উঠেছে তাদের বেশিরভাগই মালিকানা দাবি করছেন না। কিন্তু আনিসুর রহমান জায়গা দখলে নিতে চাচ্ছেন। বিএস সংশোধন নিয়ে মামলা চলমান। জায়গা পরিমাপ বিষয়ে আমাদেরকে অবগত করা হয়নি। জায়গা নিয়ে মামলাও চলমান আছে। এ অবস্থায় খাস জমি চিহ্নিত করতে গিয়ে একটি পক্ষকে জমি দখলের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের যে কাগজপত্র আছে সেটি নিয়ে আমরা ইউএনও ও অ্যাসিল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের আদেশে খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি চিহ্নিত করেছেন। কিন্ত কাউকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে তারা আদালতের শরণাপন্ন হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।”

ছবি: শ্মশানের জমি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

সমাবেশে বক্তব্য দেন রাধামাধব আখড়া ও কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি চন্দন কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার চক্রবর্তী, জেলা হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট জয় লাল শীল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব সাংবাদিক প্রবীর চৌধুরী রিপন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা বিএনপি নেতা মনতাজ মিয়া, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাবেদ আহমদ ভূঁইয়া, ডা. ভজন দেব, প্রভাষক সুভাষ দাস, দুলাল ঘোষ জয়।

বক্তারা আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মহাশ্মশানের জমি উদ্ধারের জন্য সময় বেঁধে দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রশাসন কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

ছবি: শ্মশানের জমি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

সমাবেশ থেকে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে,
২৯ অগাস্ট আখাউড়া উপজেলার সব মন্দির কমিটির নেতাদের নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ;
৩০ অগাস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর সুবিধাজনক সময়ে প্রত্যেক মন্দিরে প্রতিবাদ সভা;
২ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান;
৩ সেপ্টেম্বর আধাবেলা দোকান বন্ধ;
৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় মন্দির ও হিন্দু বাড়িতে একযোগে শঙ্খ বাজানো।

এ ছাড়া সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। কালো পতাকা উত্তোলন চলমান থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *