
চন্দ্রনাথ শিব মন্দিরটি সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অতি পবিত্র স্থান। খ্রিস্টিয় অষ্টম শতাব্দীতে এখানে পাল বংশের রাজারা রাজত্ব করতেন। চন্দ্রনাথ শিবমন্দিরের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বৌদ্ধ মঠ, শঙ্কর মঠ।
১৯৫০শে ১৫ই ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রির দিন এখানেই সংগঠিত হয় নৃশংস হিন্দু গনহত্যা। স্বাভাবিকভাবেই সেদিন সমগ্র পূর্ব বাংলা, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে তীর্থযাত্রীরা মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে হিন্দু ধর্মের পূর্ণ্যভূমি সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অন্যদিকে ১০ তারিখ থেকেই গোটা পূর্ববঙ্গে হিন্দু গণহত্যা শুরু হয় এবং যা চট্টগ্রামে ১২ই ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই হিন্দুদের মেলা বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়। ১৪ই ফেব্রুয়ারি সারাদিন মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীরা চট্টগ্রামে এসে হাজির হোন। আনসার ও মুসলিমরা প্রত্যেক নিরস্ত্র তীর্থযাত্রীদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ করে, সন্ধেবেলার মধ্যেই সেখানে অবস্থিত সমস্ত তীর্থযাত্রীকে হত্যা করা হয়। পরের দিন অর্থাৎ ১৫ ই ফেব্রুয়ারি মহা শিবরাত্রির দিন ফের প্রচুর তীর্থযাত্রী স্টেশনে নামেন। নামার সাথে সাথেই আনসাররা তাদের ওপর আক্রমণ করে। ট্রেন থেকে নামতেই তাদের হত্যা করা হয়। ট্রেনের প্রতিটি কামরায় খুঁজে খুঁজে তীর্থযাত্রীদের খুন করা হয়। সীতাকুণ্ড স্টেশনে আসা সব ট্রেনগুলিতেই এভাবে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বেছে বেছে নৃশংসভাবে খুন করে আনসাররা। এরপর স্টেশন সংলগ্ন এলাকার হিন্দু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় জনসাধারণের ধারনা মতে শুধু মিরেশ্বরাই ও সীতাকুণ্ডের বধ্যভূমিগুলোতে ১৫ থেকে ২৫ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। মাহাদেরবের পূজা কাঁচা দুধ গঙ্গাজলের পরিবর্তে রঞ্জিত হয়ে নিরীহ হিন্দুর রক্তে। পূর্ণ্যভূমি সীতাকুণ্ড হয়ে যায় হিন্দু বধ্যভূমি সীতাকুণ্ড। ইতিহাস ভুলে যাওয়া বর্তমানের প্রজন্ম আমরা, শুনতে পাইনা শত শত নিরস্ত্র তীর্থযাত্রীর হাহাকার, মরন আর্তনাদ।
লিখেছেন – দিতি ভট্টাচার্য।
লেখাটা সংগ্রহ করা হয়েছে –
দক্ষিণবঙ্গ আহ্বান, সংখ্যা-৭ থেকে।