মুখোশ পরা সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ করেছে।

ছবি: রামেসু বাজারে আদিবাসীদের দোকানে অগ্নিসংযোগ।

রামেসু বাজারের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আগুনের ক্ষত। দোকানপাটের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ঘরবাড়িতেও। মঙ্গলবার দেখা যায় ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া দোকান ও ঘর থেকে ব্যবহারযোগ্য মালপত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। অনেকে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিলেন।

রামেসু বাজার এলাকায় পাহাড়ি তরুণী ঊর্মি মারমা বলেন, ‘আমার বাড়ি হাফছাড়ি এলাকায়। এখানে এক আত্মীয়র বাসায় থেকে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে পালি ভাষায় লেখাপড়া করি। রোববার কী থেকে কী হয়ে গেল এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। আমার আত্মীয় সাইজাহ্লা মারমা রামেসু বাজারে শাকসবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিছু লোক হঠাৎ পাড়ার অন্যান্য ঘরের মতো আমার আত্মীয়র ঘরটিতেও আগুন লাগিয়ে দেয়। চোখের সামনেই পুড়ে গেছে ঘর। কোনো কিছুই ঘর থেকে আমরা বের করতে পারিনি। এক কাপড়ে আছি। চোখে শুধু অন্ধকার দেখছি। যারা ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের অনেকেই মুখোশ পরা ছিল।’

রামেসু বাজারের অর্ধশতাধিক দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজারের এক পাশে একটি তিনতলা ভবন। এই ভবনে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১৫টি প্রতিষ্ঠান। ভবনটিতে রোববার আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

তিনতলা ভবনে থাকা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা কার্যালয়, পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়, মহিলাবিষয়ক কার্যালয়, তথ্য আপা কার্যালয়, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, সূর্যের হাসি ক্লিনিক, এনআরডিএসের অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই ভবনের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক শিবু ঘোষ বলেন, ‘কারা এই কাজ করেছে, সেটা সবাই জানে। তাই আমি তাদের নাম বলতে চাই না। তবে এটি বলতে পারি, তারা পরিকল্পিতভাবে নগদ টাকাসহ লুটপাট চালানোর পাশাপাশি ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত ১২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে রামেসু বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে কিছু লোক হঠাৎ এসে দোকানপাটে লুটপাট চালিয়েছে। এরপর একে একে দোকানগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাজারে যেসব দোকানে আগুন দেওয়া হয় তার অধিকাংশের মালিক পাহাড়ি। কিছু প্রতিষ্ঠান বাঙালির। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, আগুনে মোটরসাইকেল পুড়েছে অন্তত ১৮টি। মানুষের ঘরবাড়িতে থাকা গরু-ছাগলও লুট করা হয়েছে।

গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির এক মারমা ছাত্রীকে তিন সেটেলার বাঙালি যুবক গণধর্ষণ করে। এই গণধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কয়েকদিন ধরেই চলছিলো বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি। তার এই ধারাবাহিকতায় ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবারও ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে সকাল সন্ধ্যা অবরোধ চলছিলো। গুইমারা রামেসু বাজার এলাকায় গুইমারা টাউন হলের সামনে অবরোধ পালনকালে দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনী অবরোধকারী জুম্ম ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালায়। গুইমারায় রামেসু বাজারে সেনাবাহিনী এবং সেটলার বাঙালিদের হামলা-গুলিবর্ষণে অন্তত ১০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে। পরে ৩জন আদিবাসী মারা গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সেটলার বাঙালিরা পাহাড়ি আদিবাসীদের দোকানপাট এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *