
৫ই আগস্টের পর থেকে গত এক বছরে সংঘটিত হয়েছে ২৪৪৮টি আক্রমণ, ৩৭টি ধর্ষণ, ৪৭টি হত্যা, ৪৮টি ইসলাম অবমাননার অভিযোগে হামলা এবং ৫২ জন শিক্ষককে জোরপূর্বক অবসর দেওয়া। শুধু হিন্দু পরিচয়ের কারণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কনভয় থেকে মানুষ ছিনিয়ে নিয়ে হত্যাও করা হয়েছে।
ইউনুসের নেতৃত্বে বৌদ্ধবিরোধী আন্দোলনে নিহত ছাত্র-মানুষের বিচার প্রক্রিয়া আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু হিন্দুদের ওপর সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, দোকান দখল, কিংবা ব্লাসফেমির নামে গণপিটুনির বিচার বিষয়ে তিনি কখনো কিছু বলেননি, বলবেনও না।
গত ১৮ই আগস্ট ২০২৪, ২৫শে অক্টোবর চট্টগ্রামে, এবং ২০শে নভেম্বর ২০২৪ রংপুরে আমাদের প্রতিবাদ সমাবেশের পর ২৫শে নভেম্বর মুখপাত্র চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে এবং আরও চারটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। শুধু তিনি নন—আরও ৪৯ জন বন্দি, ২০০ জন সহকর্মী পলাতক অবস্থায় আছেন। কিন্তু ইউনুস এবং তাঁর সহযোগীরা এই অবিচারের বিরুদ্ধে নীরব থেকেছেন। আর হিন্দুরাও এই ছেলেদের কোন খবর রাখেনি- কিন্তু হওয়ার কথা ছিল আলাদা।
যেসব সহযোদ্ধা আজ কারাগারে, তাদের পরিবার-পরিজনের খবর রাখার মতোও কেউ নেই। আমরা কেবল প্রতিটি হামলার পর কিছুটা তৎপরতা দেখাই, তারপর সব ভুলে যাই।
জামাতের আমার এক রোকন বন্ধুর সঙ্গে কলেজ জীবন থেকে পরিচয়। বিখ্যাত “জি-টি” হামজা ও কাসেমের সঙ্গে তারা রাতে গোপনে পোস্টার লাগাতেন। জাসদের দাপটে যখন প্রকাশ্যে থাকতে পারতেন না, তখনও তারা নিজেদের মানুষের খোঁজখবর রাখতেন, পরিবারের পাশে দাঁড়াতেন। ২০০৭ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করেও হিন্দু সমাজে আমি এই সংস্কৃতি দেখিনি। তবে হ্যাঁ, পূজার পর প্রসাদ নিয়ে মারামারি কিংবা কমিটি নিয়ে বিভক্তি—প্রায় প্রতিটি মন্দিরে ও এলাকায় দেখেছি।
হিন্দুরা জাতি হিসেবে স্ববিরোধী—এমন উদাহরণ অসংখ্য। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান সত্ত্বেও তাঁর নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, অথচ জিন্নাহ তাঁকে নেতা হিসেবে সম্মান করতেন। কিন্তু হিন্দুরা জাতির পিতা হিসেবে মেনে নেয় গান্ধীকে। এক হিন্দু বিপদে পড়লে অন্য হিন্দু তাতে বিকৃত আনন্দ পায়—এ যেন এক অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব। তারপরও আমি আশাবাদী ইয়ংদের নিয়ে যারা দিন রাত কাজ করে চলেছেন।
লিখেছেন –
প্রফেসর চন্দন সরকার
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী।