CAA: উদ্বাস্তু অনুপ পালের জীবন!

ছবি: CAA

১৮বিঘা জমি দখল করে নেয় আজহার মোল্লা, জমির শোকে মারা যায় বাবা। অনুপ পাল এবং তার স্ত্রী পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে আটক হয় বিএসএফের হাতে, বিএসএফ বাংলাদেশে পুশব্যাক করলে সেখানে বসবাসের জায়গা না থাকায় রাতেই আবার তারা ভারতে প্রবেশ করে। ২০২২ সালে আবার তারে মাকেও অবৈধ ভারতে বসবাসের অভিযোগে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে বিএসএফ। বর্তমানে অনুপ পালের মা মানবেতর জীবন যাপন করছে বাংলাদেশে।

অনুপ পাল ৯ সেপ্টেম্বর রবিবার ঠাকুরবাড়িতে এসেছে সিএএ আইনে আবেদন করার জন্য। অনুপ পালের সাথে তখন কথা হয় ত্রিকালকন্ঠের। জানাযায় অনুপ পাল কেন বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে প্রবেশ করেছে এবং কিভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে।

অনুপ পালের বাড়ি ছিলো বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার দিগঙ্গা গ্রামে। অনুপ পালের বাবার নাম বনমালী পাল এবং মাতার নাম মনিকা পাল।

বাংলাদেশে অনুপ পালের বাবা বনমালী পালের ১৮ বিঘা সম্পত্তি ছিলো। ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসলে নিরাপত্তাহীনতায় পরে বনমালী পালের পরিবার। তখন অনুপ পাল ছোট। বনমালী পাল তখন ২ বিঘা জমি ৮ হাজার টাকা মূল্যে স্থানীয় আজহার মোল্লার কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন।

কিন্তু আজহার মোল্লা, জাফর শেখ এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান মিলে বনমালী পাল কে মোল্লারহাট উপজেলার কাউন্সিল অফিসে জিম্মি করে আটকে রাখে। অন্যদিকে ৬/৭ জনের একটি দল বনমালী পালের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী মনিকা পাল হুমকি দিয়ে বলে, তাদের সম্পত্তির কাগজ-পত্র না দিলে বনমালী পাল কে হত্যা করবে। তখন মনিকা পাল ভয়ে তাদের সকল সম্পত্তির কাগজ-পত্র দিয়ে দেয়।

এরপর বনমালী পালকে জমির কোন টাকা-পয়সা না দিয়ে তাদের মোট ১৮ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় আজহার মোল্লা, জাফর শেখ এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান গং।

জমি দখলের পর কিছু দিন বনমালি পাল তার বসতঘরে বসবাস করলেও কয়েকদিন পর বাড়িতে থাকা কালী মন্দিরটি রাতের আধারে ভাংচুর করে আজহার মোল্লার লোকজন। তাই জমি দখলের ২ মাসের মধ্যে ভূমিদস্যুদের ভয়ে এবং নিরাপত্তাহীনতায় বনমালি পাল পরিবারের লোকজন নিয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। কিন্তু জমি হারানোর শোকে হতাশায় ৩ মাসের মধ্যে মারা যায় বনমালি পাল। এরপর সংসারের দায়িত্ব এসে পরে বনমালি পালের স্ত্রী মনিকা পালের উপর।

স্বামী-সম্পত্তি হারিয়ে কয়েকবছর অভাব অনটনে সংসার চালানোর পর ২০১২ সালের দিকে অনুপ পাল এবং পুত্রবধূ রিক্তা পাল পালিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে বিএসএফের হাতে গ্রেপ্তার হয় অনুপ পালের স্ত্রী রিক্তা পাল। রিক্তা পালকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গেলে অনুপ পালে বুঝতে পারে তার স্ত্রীকে সে পরবর্তীতে কোথায় খুঁজবে। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসায় অনুপ পাল বিএসএফের হাতে আত্মসর্পন করে।

অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে অনুপ পাল এবং তার স্ত্রী রিক্তা পাল বনগাঁ জেলে ৬ মাস এবং দমদম জেরে ৪ মাস কারাভোগ করেন। দমদম জেলে থাকার সময় অনুপ পালের মা মনিকা পাল তার সন্তান কে দেখার জন্য পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। মনিকা পাল দমদম জেলে গিয়ে ছেলে অনুপ পাল এবং পুত্রবধূ রিক্তা পালের সাথে দেখা করেন এবং তাদের খাবার দিয়ে আসেন।

প্রায় ১০ মাস কারাগারে থাকার পর বিএসএফ অনুপ পাল এবং রিক্তা পালকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। অনুপ পাল এবং তার স্ত্রী বাংলাদেশের যাওয়ার পর তারা অনুভব করে তাদের আসলে বাংলাদেশে কোথায় থাকার জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ওই রাতেই আবার কয়েক ঘন্টা পর অনুপ পাল এবং তার স্ত্রী কাঁটাতারের বেড়া টপকে ভারতে প্রবেশ করেন। এই সময় কাটাঁতারের আঘাত লাগে অনুপ পালের গলায়। তখন বিএসএফ তারা করলেও এবার আটক করতে পারে নাই অনুপ পাল এবং তার স্ত্রী কে।

এবার ভারতে প্রবেশ করে অনুপ পাল এবং তার স্ত্রী চলে যায় কলকাতায়। এইসময় তাদের সাথেই বসবাস করে অনুপ পালের মা মনিকা পাল। অনুপ পাল এবং তার স্ত্রী ভারতীয় কাগজপত্র তৈরী করে নেয়।

দারিদ্রতার কারণে ২০২২ সালেও মা মনিকা পালের ভারতীয় কাগজপত্র তৈরী করতে পারে নাই অনুপ পাল। হঠাৎ একদিন অবৈধ ভাবে ভারতে বসবাসের অভিযোগে এবং ভারতীয় কোন কাগজ-পত্র না থাকায় মনিকা পালকে গ্রেপ্তার করে গাইঘাটা থানা পুলিশ। এরপর অবৈধ ভাবে ভারতে বসবাসের অভিযোগে প্রায় ৭ মাস কারাভোগ করেন মনিকা পাল। কারাভোগ শেষে মনিকা পালকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে বিএসএফ।

বর্তমানে বাংলাদেশে মানবেতর জীবন-যাপন করছে মনিকা পাল। বাংলাদেশে পার্সপোট তৈরী করলেও ভিসা বন্ধ থাকায় ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না মনিকা পাল। ছেলে এবং পুত্রবধূর কাছে আসতে পারছে না মনিকা পাল।

অনুপ পাল রবিবার ঠাকুরবাড়িতে সিএএ আইনে আবেদন করতে এসে ত্রিকালকন্ঠকে জানায় তার পরিবারের এই করুন ইতিহাস। হ্যাঁ ঠাকুরবাড়ি থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সিএএ তে আবেদন করতে অনুপ পাল কে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *