
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত, চীন ও রাশিয়াকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে তার ট্যারিফ নীতির মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, ব্রাজিল, ইসরায়েল, আফ্রিকার মতো দেশও এখন এই সারিতে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন একসময় রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতো ভারতের মাধ্যমে। ভারত তেল উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে দেশে রিফাইন করে ইউরোপসহ বিশ্ববাজারে বিক্রি করছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ না দেখে এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতি অটুট থাকার কারণ হিসেবে ভারতের তেল ক্রয়কে আমেরিকা চিহ্নিত করে। এরপর ট্যারিফ ৫০% করা হয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ভারত থেকে তেল না কেনার নির্দেশ দেয়া হয়।
ফলে ভারত নতুন বাজার খুঁজে পায়—চীন। ভাবা যায়, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষে চীনের ৪৪ জন এবং ভারতের ২২ জনের সৈন্যের প্রাণহানি ও সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর এখন চীনই ভারতের তেলের বড় ক্রেতা! ১৮ আগস্ট ২০২৫-এ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে সফরে আসছেন, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দুয়ার খুলে দেবে। এর সাথে রাশিয়া, ব্রাজিল ও ইসরায়েলও এই একই প্ল্যাটফর্মে রয়েছে।
আমরা বাংলাদেশীরা সব সময় ভারতবিরোধী—ভারতীয়দের গরুর মূত্র খাওয়া থেকে শুরু করে নানা বিদ্রূপে ভরাই। অথচ নিজেরাই ভারতীয় পণ্য, খাবার, মশা মারার কয়েল, এমনকি স্ত্রীর শাড়ি আর নিজের জামার সুতাও ভারতের ব্যবহার করি। কিন্তু মুখে বলি “ভারতের দালাল”। এই মানসিকতা এক অদ্ভুত বৈপরীত্য—যেখানে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সবাই কোনো না কোনোভাবে ভারতের সাথে সম্পর্ক রাখে, অথচ জনসমক্ষে ভারতের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। ভারতের দালাল এরা হয়ার কথা কিন্তু বলা হয় গোবেচারা বাংলাদেশী হিন্দুদের। কিন্তু আমরা মওলানা ইউসুফের ওয়াযে উটের মুত খাওয়া কত ভালো সমস্ত রোগের ঔষধ তা শুনি না। বিজ্ঞানী হুজুর ইব্রাহিমের কথা শুনি না। পরিবেশবিদ পীর চরমোনাই শুনি না, যিনি দুই দিন আগের বিয়ানে বললেন পাথর তুলে ফেললে পরিবেশের জন্য নদীর জন্য ভালো। ভারতের চক্রান্ত মানবো না, দুই দিনে পাথর নাই হয়ে গেল!
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ‘ভারত বয়কট’ স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদীকে স্পেশাল গেস্ট হিসেবে নিজের দেশে নিয়ে গেলেন। বাংলাদেশেও আমরা “তাকিয়ে নীতি”তে ওস্তাদ—ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রাখতে হবে অথচ এখন আমরা ইলিশ চর মোণাইয়ের পীরকে দেখি ভারতের পাথর ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপচারিতায়। ভারত পাথর তুলতে দেয় না, কারন তাদের বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। এখন – দুই দিনের মধ্যে সিলেটের পাথর শেষ হয়ে যায়।
সত্যি কথা বলতে, আমাদের এই ভণ্ডামি ও দ্বিচারিতা আন্তর্জাতিক কূটনীতির সাথে বেমানান। বিশ্ব যখন কৌশলগত জোট আর পারস্পরিক স্বার্থে একে অপরের হাত ধরছে, আমরা তখনও আবেগে ও রাজনৈতিক স্লোগানে আটকে আছি—যা উন্নয়ন ও বাস্তবতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
লিখেছেন –
প্রফেসর চন্দন সরকার
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী।