
আসিফ নজরুল সাহেব- নিজের দেশের মাইনোরিটি নিয়ে একটু পড়াশুনা করলে হয়না? নাকি ২৬ লক্ষ ভারতীয় বাংলাদেশে চাকরী করে এই নিয়েই আছেন? জাহানারা ইমামকে মা ডাকতেন, মার সব কিছু চুরি করে অন্যদের সাল্পাই দিলেন। ভাই এখন একটু থামেন- অনেক কিছুইতো করলেন, আর কতো?
হিউম্যান রাইটসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কোনো জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যদি ১০% কম হয়, তবে তাদের মাইনোরিটি নামে চিহ্নিত করা হয়। আন্তর্জাতীক বিধান অনুযায়ী এদের জন্য মাইনোরিটি কমিশন, মাইনোরিটি মন্ত্রণালয় ইত্যাদি থাকার কথা। অনেক দেশেই এগুলো আছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো—বাংলাদেশে এই সুবিধাগুলো হিন্দুদের দেওয়া হয় না।
আবার আমরা যদি দেখি, ভারতের সমালোচনা বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টাই চলে এবং ভারত বিদ্বেষ বাংলাদেশে একটা ট্রেন্ড এবং মার্কেটে প্রচুর ডিমান্ড। ভারতে শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি—সব মিলিয়ে জনসংখ্যার মাত্র ৫% কিছু বেশি। কিন্তু তাদের মাইনোরিটি নামে চিহ্নিত করা হয় না। ভারতের সবচেয়ে বড় মাইনোরিটি হচ্ছে ২২ কোটি মুসলিম। অথচ ভারত একটি সেকুলার দেশ। সেকুলারের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১০% এর বেশি জনগোষ্ঠীকে মাইনোরিটি স্ট্যাটাস দেওয়া যায় না। কিন্তু ভারতে মুসলিমদের জন্য মাইনোরিটি কমিশন আছে, ওয়াকফ বোর্ড আছে, মাইনোরিটি মন্ত্রণালয় আছে কিন্তু থাকা উচিত ছিল শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসিদের তারা বঞ্চিত।
মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য এর কোনোটিই নেই। এ এক বিচিত্র চরিত্র। খালেদা, এরশাদ সবাই এক, শেখ হাসিনা আরো সরেস- তার বাবার মতো সবাইকে শুধু বাঙালি হতে বললেন। কাউকে কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে না হয়। হিন্দুদের মাইনোরিটি স্ট্যাটাস দেওয়া হবে না, পাহাড়িদের আদিবাসী স্ট্যাটাস দেওয়া হবে না। অথচ বিপদের সময় তাদের ঘাড়ে চড়ে বৈভবনী পার হতে চাই। এ এক অদ্ভুত আচরণ এবং চরিত্র। বাংলাদেশ যদি ইসলামিক দেশ হয়, হিন্দু হিসেবে আমি খুশি। তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। কিন্তু মুসলমানদের বাংলাদেশী হিন্দুদের মাইনোরিটি স্ট্যাটাস দিতে অসুবিধা কোথায়? নাকি সমস্যা অন্য জায়গায়—মাইনোরিটি কমিশন, মাইনোরিটি মন্ত্রণালয় তৈরি হয়ে গেলে সমস্যা? বাংলাদেশের হিন্দুরা যে বোঝে না, তা নয়। বোঝে। কিন্তু হিন্দুরা “মালাউওন” শুনতে শুনতে বড় হয়। তাই সত্য কথা বলতে ভয় পায়। আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী, বন্ধুরা যারা আমাকে কাছ থেকে দেখেছে, মিশেছে, তারা আমাকে জানে- তারা আমাকে ভালোবাসে ও সম্মান করে। কারণ আমি হিপোক্রেসি করি না। আমার অবস্থান স্পষ্ট—আমি হিন্দুদের অধিকার, মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলি, কাজ করি। কিন্তু হিপোক্রেসির মধ্যে নেই। ভারত সেকুলার থাকুক, আর বাংলাদেশ- পাকিস্থান ইসলামিক রাষ্ট্র চাইবো- এটাকেই হিপোক্রেসি বলে, তাকিয়া বাজী বলে। চাইলে দুটোই চাইতে হবে—বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ইসলামিক দেশ, আর ভারত হিন্দুস্থান, হিন্দুদের দেশ। তাতে আপত্তি কিছু নেই- চরমোনাই কি বলেন? নাকি জামাতের মতো সব গান গাওয়া যাবে জাঁতীয় সঙ্গীত গাইয়া যাবে না- হিন্দুর লেখা বলে ! সেলুকাস !
লিখেছেন –
প্রফেসর চন্দন সরকার
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী।