দুর্জয় চৌধুরীর রহস্যজনক মরদেহ উদ্ধার

কক্সবাজার জেলা চকরিয় থানার হাজত থকে স্কুলকর্মচারী দুর্জয় চৌধুরীর রহস্যজন মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

২২ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে থানার হাজতের একটি কক্ষ থেকে এই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা কমল চৌধুরীর ছেলে।

পুলিশ জানায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ও নগদে ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন দুর্জয় চৌধুরী। এরপর পুলিশ দুর্জয়কে আটক করে থানা হাজতে আটকে রাখে। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত থানা হাজতের ভেতরে দুর্জয় চৌধুরীকে হাঁটতে দেখা গেছে। এরপর তাঁর চলাফেরা দেখা যায়নি। শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।

প্রাথমিক ভাবে দেখা যায়, মরদেহের শার্ট গলায় পেঁচিয়ে হাজতের দরজার গ্রিলে ঝুলে আছে দেহ। তবে পা দুইটি মেঝেতে লাগানো। যা নিয়ে তৈরী হয়েছে সন্দেহ।

দুর্জয়ের কাকাতো ভাই সঞ্জীব দাস বলেন, “সকালে ফোন পেয়ে আমরা থানায় গেলে পুলিশ জানায় সে হাজতে সুইসাইড করেছে। সেখানে গিয়ে আমরা তাকে শার্টে পেঁচানো অবস্থায় ফাঁসিতে ঝুলন্ত দেখেছি, হাজতের ভেতরে কী হয়েছে বা পুলিশ তাকে প্রেসার দিয়েছে কি-না জানি না। হাজতের বাইরে তো কনস্টেবল থাকার কথা। তাহলে কি তিনি দায়িত্বে ছিলেন না? দুর্জয়ের বিরুদ্ধে একটি চেক জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি, বা কোনো প্রকার তদন্ত করা হয়নি। অভিযোগ বিষয় জানতে থানায় গেলে দুর্জয়কে গ্রেপ্তার দেখিয়ে হেফাজতে রাখা হয়।”
সঞ্জীব দাস আরও বলেন, খবর পেরে রাত সাড়ে ১২টায় পরিবারে লোকজন খাবার ও ঔষুধ নিয়ে দুর্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন থানা হেফাজতে দায়িত্ব থাকা পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিনকে জানানো হয় দুর্জয় এক সপ্তাহ আগে স্ট্রোক করছিল, তার শ্বাসকষ্টজনিত রোগ আছে। দুর্জয় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত তাই তাকে যেন ভালভাবে নজর রাখে সে অনুরোধও করেছিল পরিবারের সদস্যরা। এই সময় তার মার সাথে কথা বলে দুর্জয়। দুর্জয় মাকে বলে- মা আমি কোনো ভুল ত্রুটি করি নাই। আমাকে ভুল বুঝিও না, আমি ট্রমার মধ্যে আছি।”

নিহত দুর্জয়ের বাবা কমল চৌধুরী বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের চেক জালিয়াতি ও নগদ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম দুর্জয় চৌধুরীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে দুর্জয়কে ১০-১২ দিন ধরে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। এতে দুর্জয় বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও একই অভিযোগে তাঁকে বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত একটি কক্ষে জিম্মি করে রাখা হয়। পরে দুর্জয়কে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *