
কৈলাশ চন্দ্র বর্মনের পৈতৃক জমি দখলে মরিয়া বিএনপি নেতা আবু তালেব গং। জোরপূর্বক জমি দখল এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বিএনপি নেতা।
এই ঘটনা ঘটে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের ফাড়াবাড়ি দক্ষিণ বঠিনা এলাকায়।
২২ নভেম্বর শনিবার সকালে জমি দখলের এ ঘটনা ঘটলে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগী ৬২ বছর বয়সী কৈলাশ চন্দ্র বর্মন সদর থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কৈলাশ চন্দ্র বর্মনের সঙ্গে একই এলাকার ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) আবু তালেব, আব্দুল গফ্ফারসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন ঠাকুরগাঁও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি চলমান রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয় শনিবার সকালে আবু তালেব–গফ্ফারসহ ১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জমিটি দখল করতে আসে। খবর পেয়ে কৈলাশ ঘটনাস্থলে গেলে তাকে দেখে অভিযুক্তরা হুমকি-ধামকি শুরু করে। তাকে বলা হয়, “জমি ছেড়ে পরিবার নিয়ে ভারত চলে যা। মামলা না তুললে তোর হাত-পা ভেঙে চিরতরে পঙ্গু বানিয়ে ফেলবো।” এমন হুমকির পর ভুক্তভোগী পরিবার আতঙ্কে রয়েছে।
কৈলাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, জমিটা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও তারা জোর করে দখল নিতে আসছে। বাড়ির সামনে এসে নিয়মিত গালিগালাজ করছে। আমরা বাড়ি থেকে বের হতেও ভয় পাই। আইনের ওপর ভরসা করেই থানায় অভিযোগ করেছি। আমাদের নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকচা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য বিশু মোহাম্মদ বলেন, “আমি বহু বছর ধরে দেখছি জমিটা কৈলাশের দখলেই আছে। ২০২১ সালে মামলার পর বিষয়টি আদালতে যায়। মামলা চলমান থাকলে জোর করে দখল নিতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা যে লাঠিয়াল দল নিয়ে গেছে এটি সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। আদালতের রায়ের মাধ্যমেই সমাধান হওয়া উচিত।
স্থানীয়দের একাধিক সূত্রে জানা যায় বহিষ্কৃত নেতা আবু তালেবের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক গুরুতর অভিযোগ ছিল। নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে জমি দখল এমন নানা অভিযোগে এলাকায় বিতর্কিত ছিল তার নাম। কয়েক মাস আগে এক নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন ও মামলা করেন।
এলাকাবাসীর দাবি আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগের পর আবু তালেব আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা বলেন, সে স্থানীয় এক সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সামলাচ্ছে বলে শোনা যায়। এমনও গুজব আছে বিভিন্ন নেতার কাছ থেকে ‘আশ্রয় দেওয়ার’ নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অভিযোগ নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ রয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবু তালেব, আব্দুল গফ্ফার ও নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। জমিটি আমাদের বৈধ ক্রয়সূত্রের। রাজনৈতিকভাবে আমাদের হেয় করতে গোষ্ঠীবিরোধী লোকেরা ষড়যন্ত্র করছে। আমরা কারও জমি দখল করতে যাইনি এবং কারও প্রতি হুমকিও দিইনি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরোয়ারে আলম খান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ না এলে জমি-সংক্রান্ত এই বিরোধ বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।